করোনার টিকা তৈরি প্রায় শেষের পথে। অন্তত ৬০ কোটি টিকার ডোজ তৈরির প্রস্তুতি হয়ে গেছে ভারতের। বিদেশ থেকে আমদানি হবে আরও ১০০ কোটি টিকার ডোজ। যদি দুটি করেও টিকার শট দিতে হয়, তাহলেও আগামী বছরের মধ্যে দেশের জনসংখ্যার একটা বড় অংশের মধ্যেই টিকাকরণ হয়ে যাবে। এমনটাই দাবি করল আন্তর্জাতিক সমীক্ষা। অ্যাডভান্স মার্কেট কমিটমেন্টসের (AMC)সমীক্ষা বলছে, ভারতের ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলি যা পরিকাঠামো তাতে ৬০ কোটি ভ্যাকসিনের ডোজ তৈরি হয়ে যাবে আগামী বছরের গোড়াতেই। বিদেশি ভ্যাকসিন মিলিয়ে দেশের অর্ধেক জনসংখ্যার মধ্যে দুটি করে ডোজ দেওয়াও সম্ভব হবে। তবে ভ্যাকসিনের প্রতিযোগিতায় এখনও এগিয়ে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। প্রায় ৮১ কোটি টিকার ডোজ আগেভাগেই বুক করে রেখেছে আমেরিকা। আরও ১৬০ কোটি টিকার ডোজের জন্য কথাবার্তা চলছে। করোনা টিকায় এখন দেশের মধ্যে এগিয়ে রয়েছে সেরাম ইনস্টিটিউট, ভারত বায়োটেক ও জাইদাস ক্যাডিলা। অক্সফোর্ডের টিকার তৃতীয় পর্বের ট্রায়াল করছে সেরাম। কৃষ্ণা এল্লার সংস্থা ভারত বায়োটেক জানিয়েছে, টিকার তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল রিপোর্ট দেখেই উত্পাদন শুরু হয়ে যাবে। আগামী বছর জুন মাসের মধ্যেই টিকার পর্যাপ্ত ডোজ চলে আসবে দেশের বাজারে। অন্যদিকে, সেরাম সিইও আদর পুনাওয়ালা জানিয়েছেন, একুশ সালের শুরুতেই প্রাথমিক পর্যায়ে কোভিশিল্ড টিকার ২ কোটি ডোজ চলে আসবে। এর পরে প্রতি মাসে ৭-৮ কোটি টিকার ডোজ তৈরির চেষ্টা করা হবে। দেশের সব জায়গায় যাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে টিকার ডোজ পৌঁছে দেওয়া যায়, সে চেষ্টা করা হচ্ছে। আগামী বছরের শেষে আরও চাররকম করোনার টিকার প্রায় ১০০ কোটি ডোজ নিয়ে আসার চেষ্টা করবে ভারতের অন্যতম বৃহত্তর এই ভ্যাকসিন নির্মাতা সংস্থা। টিকার বিতরণের জন্য বিশ্বের নানা দেশকে জুড়ে গ্লোবাল কমিটি বানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। এর নাম ‘ কোভিড ভ্যাকসিন গ্লোবাল অ্যাকসেস ‘ তথা ‘ কোভ্যাক্স ‘। এর উদ্দেশ্য হল চাহিদা অনুযায়ী সব দেশেই করোনার টিকা পৌঁছে দেওয়া, বিশেষত যে দেশগুলিতে সংক্রমণের হার ও মৃত্যু বেশি তাদেরকে অগ্রাধিকার দেওয়া। কোভ্যাক্সের নেতৃত্বে আছে হু। তাদের সঙ্গে ভ্যাকসিন বন্টন ব্যবস্থার তত্ত্বাবধান করবে কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপেয়ারডনেস ইনোভেশন ও আন্তর্জাতিক ভ্যাকসিন নিয়ন্ত্রক সংস্থা গাভি। , বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা, উদ্যোগপতিদের সাহায্যে গরিব ও পিছিয়ে পড়া দেশগুলিতে টিকা পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বে রয়েছে গাভি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ, ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কের সঙ্গে যোগ রেখেই কাজ করে গাভি। অ্যাডভান্স মার্কেট কমিটমেন্টসের রিপোর্ট বলছে, টিকার ডোজ ‘বুক’ করে রাখতে বিশ্বের ধনী দেশগুলির মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে গেছে। আমেরিকা বলেছে তাদের দেশে তৈরি ভ্যাকসিনের প্রায় ৮০ কোটি ডোজই হবে তাদের নিজেদের নাগরিকদের জন্য। ব্রিটেন বলেছে, তারা প্রায় ৩৪ কোটি টিকার ডোজ নিজেদের জন্যই তৈরি করবে। ইউরোপিয়ান দেশগুলি ৪০ কোটি টিকার ডোজ বুক করে রেখেছে। কানাডা ৯ কোটি টিকার ডোজের জন্য প্রস্তাব দিয়েই রেখেছে। এগুলো ছাড়াও বিশ্বের সব দেশে টিকার অন্তত একটি করে শট পৌঁছে দিতেও কোভ্যাক্সের ১০০ কোটির বেশি ডোজ দরকার পড়বে। তবেই আক্রান্ত দেশগুলি অন্তত ২০ শতাংশ করে টিকার ডোজ পাবে।