অ্যাম্বুল্যান্সে রোগীর মৃত্যু নিয়ে কেস রুজু হল। তদন্ত শুরু করল বর্ধমান থানা। মৃতের পরিবারের তরফে ঘটনার কথা জানিয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। অভিযোগ পেয়ে বর্ধমানের দু’টি বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতিতে মৃত্যুর ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ। যে ধারায় মামলা রুজু হয়েছে সেটি জামিনযোগ্য। থানার এক অফিসার বলেন, ”তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযুক্তদের নোটিস পাঠানো হবে।”
পয়লা অক্টোবর শ্বাসকষ্ট-সহ অন্যান্য সমস্যা হওয়ায় মন্তেশ্বর থানার পিপলনের বাসিন্দা স্বপন দাসকে দু’নম্বর জাতীয় সড়কের উপর একটি হাসপাতালে ভর্তি করেন তাঁর পরিজনরা। সেখানেই তাঁর চিকিত্সা চলতে থাকে। কিন্তু ওই হাসপাতালে ক্রমাগত বেড়ে চলা ব্যয়ভার সামাল দেওয়া মুশকিল হয় ওই রোগীর পরিবারের। তাই পরিবারের লোকজন তাঁকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এই অবস্থায় অন্য একটি নার্সিংহোমে তাকে স্থানান্তরিত করার উদ্যোগ নেন পরিজনেরা। বেসরকারি ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবশ্য রোগীকে ছাড়তে রাজি হননি। এমনকি পরিবারের লোকজনকেও ভয় দেখানো হয় বলে অভিযোগ। হাসপাতাল থেকে ২ লক্ষ টাকা বিল করা হয়। পরে রোগী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়। শেষপর্যন্ত অবশ্য ওই রোগীকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। অন্যত্র স্থানান্তরের জন্য রোগীকে ভেন্টিলেশনের সুবিধাযুক্ত অ্যাম্বুল্যান্সের প্রয়োজন হয়। পরিজনরা বামবটতলারই অপর একটি বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে ভেন্টিলেশনের সুবিধাযুক্ত অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া নেন। ৭ কিলোমিটারের জন্য ২০ হাজার টাকা ভাড়া দাবি করা হয়। তাতেই রাজি হয়ে যান পরিবারের লোকজন। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ অ্যাম্বুল্যান্স আসে। অভিযোগ, তার আগেই রোগীকে অক্সিজেন দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয় ওই বেসরকারি হাসপাতালে। এমনকি ভেন্টিলেশন থেকেও বের করে দেওয়া হয়। রোগীকে অ্যাম্বুল্যান্সে তোলার সময় কোনও অক্সিজেনের ব্যবস্থা ছিল না বলেই পরিবারের অভিযোগ। এদিকে রোগীকে ওঠানোর আগে অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যাটারি খারাপ হয়ে যায়। সারিয়ে এনে রোগীকে তুলে রওনা দেয় অ্যাম্বুল্যান্সটি। কিন্তু মাত্র কয়েক কিলোমিটার দুরে গিয়েই ফের বিকল হয়ে যায় অ্যাম্বুল্যান্স। এমনকি ভেন্টিলেটরও কাজ করা বন্ধ করে দেয় বলে অভিযোগ। ইতিমধ্যে রোগী মারা যান। একটি জনবহুল এলাকায় ওই ঘটনা ঘটে। স্বপনবাবুর বাড়ির লোকজন অভিযোগ করেন, অক্সিজেনের অভাবেই মারা গেছেন তিনি। এরপরেই উত্তেজিত কিছু মানুষ অ্যাম্বুল্যান্সটিতে ভাঙচুর শুরু করে। তাদের রোষ থেকে বাঁচতে ড্রাইভার অরিন্দম দত্ত পালিয়ে যায়। আটক করা হয় টেকনিশিয়ানকে। মৃতের আত্মীয় কৃশানু রায় এই ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। তাঁর অভিযোগ, দু’টি বেসরকারি হাসপাতালের গাফিলতিতেই মৃত্যু হয়েছে তাঁদের পরিবারের সদস্যের। আর কারও যাতে এভাবে মৃত্যু না হয় সে ব্যাপারে পদক্ষেপ করারও দাবি জানিয়েছেন অভিযোগকারী।