পরিবেশ দূষণের কারণও যেমন মানুষ, তেমনই তার বোঝাও বয়ে বেড়াতে হয় মানুষকেই। শব্দ দূষণ, বায়ু দূষণ, জল দূষণ- সবের বোঝাই বইতে হয় মানুষকে। আর দূষণের প্রভাব সব চেয়ে বেশি পড়ে শিশু এবং বয়স্কদের উপরে। সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় ধরা পড়েছে দূষণ সংক্রান্ত আশ্চর্য এক তথ্য। বাতাসের দূষণ ২০ শতাংশ কমলে স্কুলপড়ুয়া শিশুদের শেখার ক্ষমতা না কি বেড়ে যায়!
তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে শিশুদের মগজের কথা ভেবেই সারা পৃথিবীতে যদি সম্ভব না-ও হয়, অন্তত স্কুল চত্বরের বাইরের পরিবেশে দূষণের মাত্রা কমানো দরকার । এমনটাই জানিয়েছে ডেইলি মেইল।
ইংল্যান্ডের ম্যাঞ্চেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের রিপোর্ট বলছে যে যানবাহন থেকে নির্গত ধোঁয়ায় নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড থাকে। এই গ্যাসের পরিমাণ যদি এক পঞ্চমাংশও অর্থাত্ ২০ শতাংশ কমানো যায়, তা হলে স্কুলপড়ুয়াদের স্মৃতিশক্তি বাড়তে পারে ৬.১ শতাংশ। এই জন্য কলকারখানার আশে-পাশে স্কুল বানানো চলবে না। কারণ কলকারখানা থেকেও যে ধোঁয়া বের হয়, তাতে থাকে নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড।
গবেষক দলের অন্যতম অধ্যাপক মার্টি টঙ্গরেন বলেছেন যে তাঁরা এর প্রত্যক্ষ প্রমাণ পেয়েছেন। দেখেছেন যে দূষণ কমলে শিশুদের জ্ঞান আহরণের ক্ষমতা বাড়ে। অন্য দিকে দূষণের মাত্রা বাড়লে কমে যায় স্মৃতিশক্তি। কেন্দ্রের এই ব্যাপারে অবিলম্বে নীতি তৈরি করা দরকার।
তবে গবেষণাটি ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের হলেও সমীক্ষা চালানো হয়েছিল ইংল্যান্ডে নয়, বরং স্পেনের একটি স্কুলে। স্পেনের স্কুল এবং তার আশেপাশের চত্বরে করা সমীক্ষা থেকে জানা গিয়েছে যে দূষণের মাত্রা ২০ শতাংশ কমলে স্কুলের পড়ুয়াদের স্মৃতিশক্তি অনেকটা বেড়ে যায়। সাধারণের চাইতে ৪ সপ্তাহ পর্যন্ত তথ্য মনে রাখার ক্ষমতা বাড়ে। দূষণের ফলে শুধু স্মৃতিশক্তির ক্ষয় নয়, শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা, বুদ্ধিমত্তার অনুপাত (আইকিউ) কমে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে।
সন্দেহ নেই- বায়ুদূষণ নানা ভাবে মানবদেহের ক্ষতি করে। গাড়ি ও কারখানায় জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলে ধূলিকণা ও অতিক্ষুদ্র কণা তৈরি হয়। প্রতিবার প্রশ্বাস গ্রহণের ফলে এই কণাগুলি শরীরে প্রবেশ করে এবং হৃদযন্ত্রের সমস্যা, স্ট্রোক, অ্যাজমা, নিউমোনিয়া এবং লাং ক্যানসারের ঝুঁকি তৈরি হয়। এই কণাগুলি এতই ক্ষুদ্র যে তারা শরীরের সর্বত্র পৌঁছতে পারে। বায়ুদূষণ নিয়ে যত গবেষণা হচ্ছে, ততই এর সঙ্গে যুক্ত রোগের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে- এখন এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কোভিড ১৯-ও।