দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে কেরলে বিগত সাত দিন ধরে ক্রমাগত বৃষ্টিপাত হয়ে চলেছে সেইসাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নদীর জলস্তর, ভূমিধস ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ । ক্রমাগত জল বাড়ার ফলে নদী ও সমতল ভূমির মধ্যে কোন পার্থক্যই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না । বন্যার ফলে শুধু রাজ্যের মানুষই না সমস্যার মুখে পড়েছে ভিন্ন রাজ্য থেকে বেড়াতে যাওয়া পর্যটকরাও । বৃষ্টিপাতের পরিমাণ এতটাই বেশি যে ২৬ বছরের প্রথম চেরুথনি বাঁধের দুটি লকগেট খুলে দেওয়া হয়েছে , সেই সাথে আরো প্রায় তেইশটি মত জলাধারের গেট খুলে দেওয়া হয়েছে যার ফলে জলস্তর এমন বিপদসীমার কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে ।
সেই সাথে আরো কপালে চিন্তার ভাঁজ যোগ করেছে আবহাওয়া দপ্তর । আজ এখনো পর্যন্ত বৃষ্টিপাত না হলেও হবার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানায় হাওয়া অফিস । কেরলের বন্যা পরিস্থিতি এতটাই উদ্বেগজনক যে ইতিমধ্যে রাজ্যে ঘুরে গেছেন প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী , সেইসাথে ৫০০ কোটি টাকা কেরলের বন্যা দুর্গতদের সাহায্যের জন্য রাজ্য সরকারকে অনুদান দেওয়ার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী এবং বন্যা দুর্গতদের মাথাপিছু দু’লাখ টাকা ও আহতদের মাথাপিছু ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী ।
দুর্যোগ মোকাবেলায় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ভারতীয় সেনা, নৌসেনা, NDRF বাহিনী . দুর্গম এলাকাগুলোতে স্পিডবোট নৌকা ও হেলিকপ্টারের মাধ্যমে উদ্ধারকার্য চালাচ্ছেন ভারতীয় জওয়ানরা । বন্যার জলে জলমগ্ন কোচি বিমানবন্দর যার ফলে এয়ারলিফটে সমস্যা হলেও হেলিকপ্টার এর মাধ্যমে ও জেমিনী বোট এর মাধ্যমে উদ্ধার কার্য চালিয়ে যাচ্ছে ভারতীয় বায়ুসেনা ও নৌসেনা । যারমধ্যে সবথেকে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো ঝুঁকি নিয়ে নেভি ক্যাপ্টেন রাজকুমার সি কিং ৪২ বি হেলিকপ্টার নিয়ে ঘন জঙ্গলের মাঝে একটি বাড়ির ছাদে হেলিকপ্টার অবতরণ করে উদ্ধার করে প্রায় ২৬ জন আটকে পড়া বাসিন্দাদের সেই সাথে সাজিতা জাবিল নামক বছর পঁচিশের এক অন্তঃসত্ত্বা মহিলাকে উদ্ধার করে ভারতীয় নৌ বাহিনী ।
কেরলের এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে গোটা দেশ । বিভিন্ন রাজ্য থেকে পাঠানো হচ্ছে অনুদান সামগ্রী থেকে শুরু করে বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য পোষাক আশাক সহ অর্থ সাহায্যও । এছাড়া বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা অনুদান সংগ্রহ করে তা দান করছে কেরলের বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায়, সেইসাথে গোটা দেশ এই মুহূর্তে প্রার্থনা করছে যেন খুব শিগগিরই কেরল থেকে মুক্ত হতে পারে ।